
দিনের বেলায় গরম থাকলেও রাতে নেমে আসছে হালকা শীত—বিশেষ করে পাহাড়ি ও দুর্গম এলাকায় ঠান্ডার তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। ঋতু পরিবর্তনের এ সময়ে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুদের। আক্রান্তদের বেশিরভাগের বয়স ৬ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে।
খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে এখন রোগীর চাপ ধারণক্ষমতার প্রায় চার গুণ। ১৫ শয্যার ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে অন্তত ৬২ জন শিশু। প্রতিদিন বহির্বিভাগেও চিকিৎসা নিচ্ছে কয়েক শ’ রোগী। শয্যা সংকটে অনেক শিশুকেই ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
রোগীর স্বজন মো. রেশমত উল্ল্যা, মরিয়ম বেগম ও কবিতা চাকমা জানান, “ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বাচ্চাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। চিকিৎসা ভালো হলেও জায়গার অভাবে অনেককে ফ্লোরে থাকতে হচ্ছে। পাশের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ ছয় বছরেও শেষ হয়নি; সেটি চালু হলে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে চিকিৎসা নিতে পারতাম।”
শিশু ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স প্রিয়াঙ্কা রানী ভৌমিক বলেন, “রোগীর চাপ অত্যন্ত বেশি। ১৫ বেডের ওয়ার্ডে এখন ৬২ শিশু ভর্তি আছে। জায়গার অভাবে ফ্লোরেও চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। নতুন ভবন দ্রুত চালু হলে সেবা আরও উন্নত হবে।”
হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ওমর ফারুক বলেন, “ঋতু পরিবর্তনের কারণে নবজাতক ও শিশুরা বেশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকেই ‘সিভিয়ার নিউমোনিয়া’ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে। ঠান্ডা বাড়লে আরও রোগীর চাপ বাড়তে পারে।”
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রিপল বাপ্পী চাকমা জানান, “দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া ও ঠান্ডাজনিত রোগ বেড়েছে। আতঙ্কিত না হয়ে অভিভাবকদের শিশুদের অতিরিক্ত যত্ন নিতে হবে—শরীর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুছে দিতে হবে এবং উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে আনতে হবে।”
তিনি আরও জানান, “চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১২ শিশু মারা গেছে।”
উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও বর্তমানে এটি মাত্র ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। ৫৭ জন চিকিৎসকের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ১৮ জন। স্থানীয় সুশীল সমাজের মতে, নতুন ভবনের নির্মাণকাজ দ্রুত সম্পন্ন ও পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দিলে জেলার দীর্ঘদিনের স্বাস্থ্যসেবা সংকট অনেকটাই লাঘব হবে।